নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পর্যবেক্ষণের জন্য সারভাইলেন্স ক্যামেরা বহুল ব্যবহৃত একটি ডিভাইস। প্রচলিত পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা সিস্টেম আমাদের দেশে সিসিটিভি নামে পরিচিত হলেও এটি মুলত দুইটি ধারায় বিভক্ত।
ক্যামেরার ধরণ, ভিডিও ধারণ, কানেক্টিভিটি ও সিগন্যাল ট্রান্সফারের ভিত্তিতে সারভাইলেন্স বা পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা পদ্ধতি দুই রকম। 1. CCTV, 2 IP camera। এই আর্টিকেলে উভয় ঘরানার সারভাইলেন্স ক্যামেরা সিস্টেম সম্পর্কে বেসিক ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
CCTV
পর্যবেক্ষণ ক্যামেরার প্রসঙ্গে আসলেই মনে ভেসে ওঠে Close-circuit Television বা CCTV-এর কথা। সারভাইলেন্স মনিটরিং সিস্টেমের অ্যানালগ পদ্ধতিটি সবচেয়ে পুরনো পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। এই সিস্টেমে ক্যামেরার সাথে যুক্ত থাকে একটি Digital Video Recorder বা DVR। এটি মূলত একটি CCTV সেট-আপ বক্স, যা ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরার ধারণকৃত ছবি ও ফুটেজ ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করে রেকর্ড, প্রসেস ও স্টোরেজে সংরক্ষণ করে।
IP camera
Internet Protocol বা IP camera তুলনামূলক আধুনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা ধারণকৃত ছবি বা ফুটেজ সরাসরি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে চলে যায়। এই সিস্টেমে কেন্দ্রীয় অংশে থাকে একটি রেকর্ডার যুক্ত থাকে যা Network Video Recording বা NVR নামে পরিচিত। এই সিস্টেমে IP ক্যামেরা এনকোড ও প্রসেস করে এর ধারণকৃত ছবি বা ফুটেজ যেকোন অবস্থানে স্ট্রিমিং বা স্টোর করা যায়।
*এই দুই ধরণের বাইরে XVR নামের আর একটি সারভাইলেন্স সিস্টেম রয়েছে যা অ্যানালগ সিকিউরিটি সিস্টেমের coax ক্যাবলের মধ্যে দিয়েও HDCVI, TVI, AHD ইত্যাদি হাই-ডেফিনিশন সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে এবং CCTV এর বর্ধিত রেঞ্জ হিসেবে কাজ করে। XVR –এ একই সাথে 16টি BNC এবং 8টি IP ক্যামেরা সমর্থন করে।
Types of IP Cameras
গ্রাহকের প্রয়োজনের ধরণ ও চাহিদা বুঝে বেশ কয়েক রকম সারভাইলেন্স ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়।
Box Camera: সাধারণ ছোট পরিসরে দোকান বা ঘরোয়া পরিবেশের পর্যবেক্ষণের জন্য বক্স ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়। বক্স ক্যামেরা মূলত স্থির ফোকাসে ফিক্স করা থাকে এবং এতে সাধারণত কোন জুম লেন্স থাকে না। তবে গ্রহক চাইলে এতে C/CS মাউন্ট লেন্স লাগিয়ে নিতে পারবেন। বক্স ক্যামেরা দেয়াল, ছাদ বা যেকোন শক্ত অবলম্বনে লাগানো যায়।
Dome Cameras:
দেখতে অর্ধগোলকার ক্যামেরা ডোম ক্যামেরা হিসেবে পরিচিত। এটি সাধারণত ছাদে লাগানো থাকে এবং এর ফোকাস ম্যানুয়ালি পরিবর্তন করা যায়। আঘাত ও পানিরোধী এ ধরণের ক্যামেরা দিন বা রাত উভয় সময়ই কার্যকর থাকে। প্রয়োজনভেদে ডোম ক্যামেরাও দুই রকম।
Outdoor Camera: সাধারণ বাড়ির বাইরে ব্যবহারের জন্য এর P-Iris লেন্স দেয় চওড়া ডেপ্থ-অব-ফিল্ড, যা সামনের প্রায় 90 ডিগ্রি কোণের ছবি তুলতে সক্ষম। আউটডোর ক্যামেরার দুই রেঞ্জের লেন্স হয়ে থাকে।
- রাস্তার জন্য 40মিটার কাভারেজের লেন্স।
- মাঠ বা বড় পরিসরের জায়গা কাভারেজের জন্য 80 মিটার লেন্স।
Indoor Camera: গলিপথ, সিড়ি বা এরকম সরু জায়গা কাভারেজের ক্ষেত্রে এ ধরণের ডোম ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়। এর কাভারেজ রেঞ্জ সাধারণত 20 মিটার হয়ে থাকে।
Bullet Camera:
ডোম ক্যামেরার মত বুলেট ক্যামেরাও নির্ধারিত পরিসরের জন্য ফিক্সড ফোকাস লেন্সের শক্তিশালী সারভাইলেন্স ক্যামেরা। তবে এর রেঞ্জ এবং জুম করার সক্ষমতা ডোম ক্যামেরার চেয়ে বেশি। বুলেট ক্যামেরার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর সাবজেক্ট আইডেন্টিফিকেশন ফিচার। বিল্ট-ইন সেন্সর থাকায় বুলেট ক্যামেরা খুব সহজেই সাবজেক্ট সনাক্ত করতে সক্ষম। পাশাপাশি আউটডোর ক্যামেরা হিসেবে এর পানিরোধী ক্ষমতা ও ঘাতসহতা অনেক বেশি। ফলে রোদ, বৃষ্টি, ঝড় বা শৈত্যের মত বিরূপ আবহাওয়া এর কোন ক্ষতি করতে পারে না।
PTZ Camera:
PTZ বা Point-Tilt-Zoom ক্যামেরা উপরোক্ত সব ধরণের ক্যামেরার চেয়ে আধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ। এটি সচল ক্যামেরা যা ফোকাস বস্তুর দিকে পয়েন্ট করে উপরে-নিচে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে নড়াচড়া করতে সক্ষম। এর 20x Optical Zoom ও 10x Digital Zoom ও ডানে-বামে ঘোরার Panoramic ফিচার নির্ধারিত রেঞ্জের মধ্যে ফোকাস বস্তুর উপর নজরদারির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী ক্যামেরা।
Equipments
CCTV –এর ক্ষেত্রে যেসব উপকরণ প্রয়োজন:
DVR/XVR, Camera, Adapter, HDD Storage, Connector, Monitor, BNC/ Balloon Cable।
IP camera –এর ক্ষেত্রে যেসব উপকরণ প্রয়োজন:
NVR/XVR, IP Camera, Adapter/ PoE switch, or Network switch, HDD, RJ45 connector, Display, Cat5/Cat6 cable।
একনজরে CCTV ও IP Cam -এর মধ্যে পার্থক্যসমূহ:
CCTV/DVR | IP camera/NVR |
এই পদ্ধতিতে ভিডিও ক্যামেরা তোলা ফুটেজ সিগন্যাল আকারে মনিটরে যায় এবং পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে। | এই পদ্ধতিতে ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরার ফুটেজ ইথারনেট লিংক নেটওয়ার্কে ডেটা হিসেবে ট্রান্সমিট করে দূরবর্তী অবস্থান থেকেও মনিটর করা যায়। |
ভিডিও সিগন্যাল coaxial ক্যাবল দিয়ে DVR এর মাধ্যমে টেলিভিশন মনিটরে দেখায়। | ডেটা আকারে NVR এর মাধ্যমে ডিজিটাল স্ট্রিমিংয়ে ফলে IP নেটওয়ার্কে ভিডিও ট্রান্সমিট হয়। |
পাওয়ার ও নেটওয়ার্ক ক্যাবল হিসেবে CCTV সিস্টেমের DVR এ coaxial বা UTP ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। | NVR সিস্টেমে Power over Ethernet বা PoE ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। |
IP Cam এর চেয়ে তুলনামূলক কম রেজুলেশন ভিডিও প্রদান করে। | CCTV –এর চেয়ে উন্নততর ভিডিও প্রদান করে। |
সর্বোচ্চ 32টি ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়। | IP নেটওয়ার্কে 5টি থেকে অসংখ্য ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়। |
CCTV সাধারণ টেলিভিশন মনিটরে এর সিগন্যাল প্রচার করে। | Wi-Fi, LAN বা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেকোন ডিসেপ্লে ডিভাইসে ভিডিও দেখা যায়। |
প্রতিটি ক্যামেরার জন্য আলাদা পাওয়ার সোর্স প্রয়োজন। | PoE ক্যাবল দিয়ে অসংখ্য ক্যামেরা NVR এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে, বাড়তি কোন পাওয়ার সোর্স প্রয়োজন নেই। |
স্বল্প খরচে প্রতিস্থাপনযোগ্য। | তুলনামূলক ব্যয়বহুল। |
HDD, SD card, SSD স্টোরেজে ভিডিও সংরক্ষণ করা যায় | বিভিন্ন Mass storage এর পাশাপাশি ক্লাউড সার্ভিসে ডেটা আকারে ভিডিও সংরক্ষণ করা যায়। |
DVR –এ ওয়্যারলেস CCTV ব্যবহার করা যায় না। | NVR –এ ওয়্যার্ড এবং ওয়্যারলেস উভয় ধরণের IP ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়। |